নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আশার আলো
আপলোড সময় :
২৮-০৪-২০২৫ ১০:০১:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
২৮-০৪-২০২৫ ১০:০১:১৭ পূর্বাহ্ন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিশে^র যেখানে যে সুযোগ আছে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। যেমন দেশের গ্যাস সংকট নিরসনে আরও বেশি এলএনজি আনার জন্য কাতার সরকারকে রাজি করিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রতিরক্ষা ইস্যুতেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে কাতার সফরে। পাশাপাশি এ সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কূটনীতিসহ আঞ্চলিক ইস্যু রোহিঙ্গা সংকট এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু গাজা সংকট নিয়েও ঢাকা-দোহার মধ্যে ইতিবাচক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার (কাতারের প্রধানমন্ত্রী) একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে মনোনীত করবেন। এ সময়ে তার কাছে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে কাতারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি এই অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন। দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণ যাতে মর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব সহায়তার আহ্বান জানান। এ ছাড়া অধ্যাপক ড. ইউনূস কাতার সফরে বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য কাতারের সহায়তা কামনা করেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে জ্বালানি, বিনিয়োগ এবং প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ সফরে কাতার বাংলাদেশকে আরও বেশি পরিমাণে এলএনজি দিতে সম্মত হয়েছে। দেশটির কাছ থেকে এলএনজি আনার বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে একটি সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন করতে প্রধান উপদেষ্টার সফরকালে রাজি হয়েছে কাতার। এ সমঝোতা স্মারক নবায়নের সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে, উৎপাদনের জন্য জ্বলানি সংকট রয়েছে। তাই এ নবায়নের সিদ্ধান্তটি খুবই ইতিবাচক। এর মাধ্যমে জ্বালানি সংকট মেটানোর চেষ্টা করা হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ স্থলভিত্তিক একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, যেখানে পাইপলাইনের সংযোগ থাকবে এবং সরবরাহ ব্যবস্থাও থাকবে, যা আর-এলএনজি হয়ে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কর্মকাণ্ডে যাবে। এটি মূলত মাতারবাড়ী থেকে কক্সবাজার প্রকল্পের আওতায় জ্বালানি অবকাঠামো আপগ্রেড করার একটি প্রকল্প।
কাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন সেনাসদস্য নেবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এই সেনাসদস্য নেওয়া শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাতারের দোহায় দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. সৌদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সঙ্গে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কাতারের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতার সামরিক খাতের সরঞ্জাম তৈরির কারখানা স্থাপন করতে পারবে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, আপনারা এ সুযোগ নিতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দোহা সফর সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি বলব, এটি সবচেয়ে সফল এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় সফরগুলোর মধ্যে একটি।’ এ সফরে এলএনজি ইস্যুতে খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকে বলেছেন, গ্যাসের অভাবে তারা কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। তাই আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চাই যাতে পর্যাপ্ত গ্যাস (বিদেশ থেকে) আনা যায়। কাতার সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ যেমন পশ্চিমা বিশে^র সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে, ঠিক তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক নিবিড় করছে। এর উদাহরণ হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার সদ্য শেষ করা কাতার সফর। সামনে হয়তো আমরা দেখব, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের আরও অনেক দেশ সফর করবেন। কাতার সফরটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। কাতারে বাংলাদেশের একটি বড় সংখ্যক ডায়াসপোরা [প্রবাসী] রয়েছে। বিগত সরকারগুলো এই ডায়াসপোরার কোনো খোঁজখবর রাখত না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা এই ডায়াসপোরার সঙ্গে যে গ্যাপ ছিল তা ফুলফিল করার চেষ্টা করছেন, যা দৃষ্টান্তমূলক। কাতার ফাউন্ডেশন বিশে^র একটি বড় এবং প্রভাবশালী সংগঠন। এ সংগঠনের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা কাতারে আর্থনা সম্মেলনে যোগ দেন। এ সফরে ফলে এটি নিশ্চিত যে সামনে কাতার থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ড. ইউনূস দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন, যা তার সফরগুলোর প্রতিচ্ছবিতে পরিষ্কার। প্রধান উপদেষ্টার এসব সফর সামনে রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটা মডেল হয়ে থাকবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের সফরগুলো থেকে আমরা আশাবাদী হই।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের কাতার সফরে গত সোমবার ঢাকা ছেড়ে দোহার উদ্দেশে রওনা দেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে দেশটির দোহায় ‘কাতার আর্থনা সামিট ২০০৫’ অংশ নেন তিনি। এ সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী ছিলেন। এ ছাড়া দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স